Cvoice24.com


নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কক্সবাজারে ‘ফেমিটুন’

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কক্সবাজারে ‘ফেমিটুন’

ছবি : সিভয়েস

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কক্সবাজারে ‘ফেমিটুন’ নামে দু’দিনব্যাপী কার্টুন প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কার্টুন একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।

রোববার (৯ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের একটি হোটেলে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। দু’দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে একশনএইড বাংলাদেশ। যেখানে সহযোগিতা করেছে কার্টুন বিষয়ক ম্যাগাজিন উন্মাদ।

অনুষ্ঠানে ইন্টার সেকটর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)’র সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর আনিকা সান্ডলান্দ, ইউনিসেফের শিশু নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক (চাইল্ড প্রটেকশন ম্যানেজার) উইলিয়াম কপাংবালা কলী, উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একশনএইড বাংলাদেশের গবেষণা বলছে, শহরের ৯৭ শতাংশ নারী যৌন হয়রানিকে সহিংসতা মনে করেন। হয়রানির শিকার ৮১ শতাংশ নারী পুলিশের সহায়তা নিতেও ভয় পান। নগরের ৪৭.৫ ভাগ নারী গণপরিবহন, রাস্তা কিংবা উন্মুক্ত জনবহুল এলাকায় চলাফেরা করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এমন প্রেক্ষাপটে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধে গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে একশনএইড বাংলাদেশ। উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। সরকার, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করতে উৎসাহিত করা। মানুষের মধ্যে সচেতনা বাড়ানো ও বিভিন্ন পক্ষকে এই কাজে আরও উৎসাহিত করতে এবারের ভিন্নধর্মী এই আয়োজন। যার নাম ‘ফেমিটুন’। নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুন নিয়ে এই আয়োজনটি কক্সবাজারে প্রদর্শিত হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহম্মদ আবুল কালাম বলেছেন, ‘কার্টুন একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি মানুষের মনের কুসংস্কার ও অজ্ঞতাগুলোকে সরাসরি আঘাত করতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের মূল্যবোধ থেকে বৈষম্যমূলক ট্যাবুকে সুক্ষ্মভাবে নাড়া দিতে পারে এই মাধ্যম। নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

কার্টুন প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য একশনএইড বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্টুনের মাধ্যমে যে বার্তা পাওয়া যায়, তা জীবনের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা তখনই সম্পূর্ণরূপে স্বার্থক হয় যখন এই বার্তাগুলো আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করি ও আমাদের চারপাশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি। এভাবে দেখতে- দেখতে, শুনতে-শুনতে মূল্যবোধ তৈরি হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এই মাধ্যম কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে।’

অনুষ্ঠানের ধারণাপত্রে বলা হয়, কার্টুন হচ্ছে সমসাময়িক সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজমের একটি অন্যতম মাধ্যম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি লেখনীর চেয়ে ক্যাপশনসহ বা একটি কার্টুন মানুষকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করতে পারে। একশনএইড মনে করে, সহিংসতা কমাতে এই প্রদর্শনী দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানুষিকতার পরিবর্তন দরকার। সে জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। কাজ করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে ‘কার্টুন’ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য এই আয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন অসমতা ও বৈষম্যমূলক আচরণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এবং এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা ও পরিসংখ্যান ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। কিন্তু ক্যাম্পেইনের এই ধরনগুলোর মাধ্যমে একশনএইড বাংলাদেশ সমাজের যে শ্রেণিগুলোতে পৌঁছাতে পেরেছে সেখানকার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই শিক্ষিত, সচেতন এবং সুরক্ষিত। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশের জীবনকে স্পর্শ করা এবং একটি সমন্বিত সমাজ তৈরি করা। এই প্রদর্শনীতে সারা বাংলাদেশ থেকে আসা তরুণ কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুন প্রদর্শন করা হবে। যেগুলো নারীর প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের হতাশাকে তুলে ধরবে এবং যে পরিবর্তন আমরা আনতে চাই সে পরিবর্তনের পথ পাড়ি দিতে আমাদের উৎসাহ যোগাবে।’

উন্মাদের সিনিয়র কার্টুনিস্ট আরিফ ইকবাল বলেন, ‘কার্টুন দিয়ে আমরা ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করি, মানুষ কার্টুনের মধ্যে বাস্তবতাকে খুঁজে পায়। সবাই কার্টুনের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কিত করতে পারে। এই প্রদর্শনীর দর্শনার্থীরাও প্রদর্শিত কার্টুনসমূহ দেখে এগুলোর বার্তার সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পর্কিত করতে পারবেন।’

প্রদর্শনীতে আসা কার্টুনগুলো মূলত নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অবৈতনিক সেবামূলক কাজ, শহরে এবং দুর্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে সহিংসতার চিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলবে। 

কার্টুনগুলো নিয়ে রাজধানীর দ্রিক গ্যালারিতে ৩ দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনী হয়েছে। এখন হচ্ছে কক্সবাজারে। এ নির্বাচিত কার্টুনগুলো ভবিষ্যতে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে ব্যবহৃত হবে। এই উদ্যোগ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সংলাপের একটি ধাপ হিসেবে কাজ করবে।

-সিভয়েস/এএন/এসএ/এমইউ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়