Cvoice24.com


রোহিঙ্গাদের আশ্রয় : অনাবাদি পড়ে আছে শতাধিক একর ফসলি জমি

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় : অনাবাদি পড়ে আছে শতাধিক একর ফসলি জমি

উখিয়ায় অনাবাদি পড়ে আছে শতাধিক একর ফসলি জমি। ছবি : প্রতিনিধি

গত ২ বছর ধরে উখিয়ায় শতাধিক একর দু’ফসলি আবাদি ধানি জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের অভিযোগ। 

গত বছর আমন চাষ করা গেলেও রোহিঙ্গাদের আসার কারণে জমির ফসল ঘরে তুলতে পারেনি কৃষকরা। পুরো এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা বসতি হওয়ায় ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুর খাদ্য, বিচরণস্থল সংকট সহ নানা সমস্যায় পড়েছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গা ও পুরাতন সব মিলিয়ে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লক্ষাধিক। এদের সকলের আবাসস্থল উখিয়া ও টেকনাফে। তবে প্রায় নয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থল উখিয়ার কুতুপালং থেকে পালংখালী শফিউল্লাহ কাটা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৩ কিলোমিটারজুড়ে। 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্ভাস্তু শিবির উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী মেগা ক্যাম্পে। এ মেগা ক্যাম্পে সাড়ে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে হারাতে হয়েছে বন বিভাগের ৬ হাজারের একরেরও বেশী বিশাল বনাঞ্চলের বনভূমি। নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে শতাধিক টিলা ও পাহাড়। ভরাট করা হয়েছে অনেক পাহাড়ি খাদ।
এসব প্রাকৃতিক জলাধার ছড়া ও খাদে হাতিসহ অসংখ্য প্রজাতির বন্য প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। রাজাপালং ইউনিয়নের মধুর ছড়া গ্রামের আবুল কাশেম সিভয়েসকে জানান, বন বিভাগের পাহাড়ি খাদ, গিরি, ঝিরি অংশের সমতল জমিতে স্থানীয় লোকজন বর্ষাকালে আমন ধানের চাষাবাদ করতো। বিভিন্ন ধরনের শাক সবজিসহ নানা ধরনের খেত করে জীবিকা নির্বাহ করে আসতো যুগ যুগ ধরে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের কারণে তা বন্ধ রয়েছে। 
পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পান বাজারের দক্ষিণে অন্তত ১০ একর দু’ফসলি জমি আবাদহীন রয়েছে। 

জমির মালিক নুরুল আলম সওদাগর জানান, জমির তিন দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা, পাহাড় ও টিলা কাটা মাটি ও বালি ধুয়ে ফসলি জমিতে এসে পড়ায় চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ বালুখালী শিয়াইল্লা পাড়ার ফরিদ আলম সহ অনেকে জানান, ফসলি জমিতে চাষাবাদ করার মতো কোন পরিবেশ নেই। তারপরও ফাঁকে ফাঁকে কিছু জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য আসায় ধান জ্বলে পঁচে গেছে।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী সিভয়েসকে জানান, বর্মা পাড়া বা তাজনিমার খোলা ক্যাম্পে তার নিজ মালিকানাধীন তিন একর জমিতে কোন চাষাবাদ করতে পারছে না গত দুই বছর ধরে। হেলাল উদ্দিন মেম্বার জানান, জামতলী ও শফি উল্লাহ কাটা ক্যাম্পের আশপাশে তার সহ আরো কয়েক জনের ৩০ একরের মত জমি রয়েছে। যেগুলো দু’ফসলি চাষাবাদ করে লোকজনের খোরাক হতো। কিন্তু দুই বছর ধরে কিছু জমিতে রোহিঙ্গার আবাসস্থল, সেবা কেন্দ্র এবং বেশীরভাগ জমিতে বর্জ্যের কারণে চাষাবাদ, খেত খামার কিছুই হচ্ছে না।

উখিয়া কৃষি অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে শতাধিক একর আবাদি জমি গত দুই বছর ধরে অনাবাদি পড়ে আছে। স্থানীয় দরিদ্র লোকজন ও কৃষকরা তাদের জমিতে চাষাবাদ ও শাক সবজির খেত খামার করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
 

-সিভয়েস/এসএইচ

উখিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়