Cvoice24.com


হ্যাকিং থেকে বাঁচান আপনার ফেসবুক একাউন্ট

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
হ্যাকিং থেকে বাঁচান আপনার ফেসবুক একাউন্ট

ছবি : প্রতীকী

বর্তমান প্রজন্মের জন্য দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ফেসবুক। ফেসবুকে প্রত্যেকের একটি গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট থাকে। যেটার মাধ্যমে সবার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। ফেসবুক ব্যবহার এখন অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে কিছু সময় না কাটালে যেন দিনটা পানসে লাগে। 

এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের জন্য ফেসবুক একাউন্ট টি পরিচিত সবার সাথে শেয়ার করা হয়। এসব কারণে ফেসবুক একাউন্টের গুরুত্ব অত্যাধিক। তবে এর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। 

হঠাৎ যদি দেখেন যে, আপনার ফেসবুক আইডিতে লগইন করতে পারছেন না, তখন কেমন লাগবে আপনার? 

নিরাপত্তাহীন ফেসবুক একাউন্ট সহজেই হ্যাকারের দ্বারা হ্যাক হয়ে যায়। যদি এরকম গুরুত্বপূর্ণ ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে মাথায় হাত ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে চরম অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। হ্যাকারের কাজের ভিত্তিতে তা কখনো প্রভাব ফেলে সামাজিক ইতিবাচক পরিচিতির উপর। আবার ক্ষেত্রবিশেষে কখনো গুণতে হয় অর্থমূল্য। এই ভোগান্তির শিকার যেন হতে না হয় তার জন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি বটে।

ইদানিং ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকিং করাটা বোধ হয় বেশ সহজ হয়ে গেছে। ফলে সবার অনলাইন অ্যাকাউন্টই কমবেশি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য হ্যাকারদেরই দেওয়া সাতটি মূল্যবান পরামর্শ তুলে ধরছি। যা মেনে চললে আপনি অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনা বেশি।

স্মার্ট পাসওয়ার্ড: যেসব অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইটে আপনার স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে, সেগুলোতে দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। অক্ষর, চিহ্ন, সংখ্যা প্রভৃতি মিলিয়ে পাসওয়ার্ড জটিল করে তুলুন। প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে ‘লাসপাস’ বা ‘পাসওয়ার্ড সেফ’ কাজে লাগতে পারে। প্রতিবছর অন্তত একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

এইচটিটিপিএস ব্যবহার: প্রতিটি ওয়েবসাইট ব্রাউজের সময় এইচটিটিপিএস ব্যবহার করুন। এইচটিটিপিএস ব্যবহার করতে ‘এইচটিটিপিএস এভরিহোয়্যার’ টুলটি ব্যবহার করতে পারেন। এই টুলটি আপনার ব্রাউজারের সব তথ্য এনক্রিপ্ট করে। আপনি যদি অ্যাড্রেস বারে শুধু এইচটিটিপি ব্যবহার করেন, তবে যে কেউ আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজের বিষয়ে নজরদারি করতে পারে।

ওয়াই-ফাই সেটআপ: ওয়াই-ফাই সেটআপের ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড দিন। ডিফল্ড পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। সিকিউরিটি এনক্রিপশন দেয়ার বেলায় ডব্লিউপিএ-২ নির্বাচন করে দিন। বেশির ভাগ রাউটারে ওয়্যারড ইকুভ্যালেন্ট প্রাইভেসি (ডব্লিউইপি) বা ওয়্যারলেস প্রটেক্টেড অ্যাকসেস (ডব্লিউপিএ) ডিফল্ট আকারে দেয়া থাকে। যেকোনো মূল্যে এ এনক্রিপশন বাদ দিন।

ফোনের ওয়াই-ফাই বন্ধ: সব সময় ফোনের ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখবেন না। হ্যাকারদের ঝোঁকই হচ্ছে এ ধরনের সুযোগ খোঁজা। সব সময় ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখলে অপরিচিত ব্যক্তিরাও ফোনের মধ্যে কী আছে, তা দেখার জন্য চেষ্টা চালায়।

সব সময় চালু রাখলে কী সমস্যা? 

সমস্যা হচ্ছে, আগে কোন কোন নেটওয়ার্কে আপনি সক্রিয় ছিলেন হ্যাকাররা তা জানতে পারেন। আগের সেই নেটওয়ার্কের সূত্র ধরে হ্যাকাররা প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। হ্যাকাররা আগের নেটওয়ার্কের ছদ্মবেশে নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি করে আপনার ফোনকে আগের কোনো ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ নেটওয়ার্কে যুক্ত করার জন্য প্রলোভন দেখায়। একবার এই নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়লে হ্যাকাররা ফোনে অসংখ্য ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে দেন এবং আপনার অজান্তেই ফোন থেকে তথ্য চুরি, নজরদারির মতো কাজগুলো চালিয়ে যান। তাই যখন প্রয়োজন থাকে না, তখনই ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ বন্ধ রাখুন।

টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার: এখন আর শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ঠিক হবে না। প্রায় সময়ই পাসওয়ার্ড হ্যাক হতে দেখা যাচ্ছে।

পাসওয়ার্ড হ্যাক হতে বাঁচার জন্য টু-স্টেপ অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবহার করুন। এখন অনেক ওয়েবসাইট বা সার্ভিস দুই স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীকে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি লগ ইন করার সময় স্মার্টফোন ও ট্যাবে আরও একটি কোড ব্যবহার করতে হয়। 

এতে অতিরিক্ত একটি স্তরের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। তাই যতক্ষণ হাতে মোবাইল ফোন থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কেউ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছে না সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ড্রপবক্সের মতো অনেক সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুই স্তরের এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া রয়েছে। নতুন কোনো যন্ত্রে যখনই লগ ইন করতে যাবেন, তখন পাসওয়ার্ড দেওয়ার পর একটি গোপন কোড চাওয়া হবে। এটি কেবল আপনার ফোনে তৎক্ষণাৎ পাবেন। যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জানেন, তবে আপনার মোবাইলে আসা কোড না জানা পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না।

ওয়াই-ফাই আড়াল নয়: আপনার হোম রাউটার সেটিংসের সময় আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘হাইড দ্য এসএসআইডি?’ আপনি যদি আপনার ওয়াই-ফাইকে আড়াল করার জন্য ‘ইয়েস’ নির্বাচন করে দেন, তখন আপনার মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ হোম নেটওয়ার্ক খুঁজে পেতে সক্রিয়ভাবে স্ক্যান করতে থাকে। সংযোগ পেলেও সব সময় নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য আপনার যন্ত্র স্ক্যান চালিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গোপন একটি প্রকল্পের ওয়াই-ফাই হ্যাকার বেন স্মিথ বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা ভাবলে এসএসডি লুকানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে পাঁচ বছর পুরোনো প্রযুক্তির কাছে সমর্পণ করেন।’

ইন্টারনেট  সুবিধার পণ্য কিনতে তড়িঘড়ি: বাজারে ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্য এলে অনেকেই তা কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্য বাজারে আনার জন্য যেভাবে তড়িঘড়ি চালায় প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার বিষয়ে তত গুরুত্ব দেয় না। 

একজন হ্যাকার এর ভাষ্যমতে, ‘ইন্টারনেট সুবিধার এমন পণ্য নিরাপদ এ কথা বলার জন্য বলা হলেও আদতে তা নয়। তাই ইন্টারনেট সুবিধার নতুন পণ্যগুলো নিরাপদ কি না, তা দেখে কেনা উচিত।’

আশাকরি এই পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার ফেসবুক আইডি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন।

আইডি হ্যাক হলে ফিরে পাবার সহজ উপায়: হ্যাক হবার পর আপনার সাধের ফেসবুক আইডিটি ফিরে পেতে হলে কাজ করতে হবে কয়েকটি ধাপে।প্রথমে আপনার ব্রাউজারের এড্রেস বার থেকে http://www.facebook.com/hacked এই লিংক এ প্রবেশ করতে হবে। এরপর মাই একাউন্ট থেকে ‌‌‌‌‘acount is compromised’ এ ক্লিক করতে হবে। তারপর ফোন নাম্বার, ইমেইল কিংবা ইউজার নাম দিয়ে আপনার সাধের ফেসবুক একাউন্টটি সনাক্ত করতে হবে সতর্কতার সাথে। ইমেইল কিংবা ইউজার নেইম দিয়ে একাউন্ট সার্চ করলে ‘security check’ অপশনে ক্যাপচা এন্ট্রি করতে হবে। এরপর একাউন্ট নির্বাচন করে পুরোনো পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এরপর নিরাপত্তাজনিত কিছু প্রশ্ন জানতে চাওয়া হবে। কয়েকক ধাপে সেগুলো সঠিক উত্তর দিলে আপনার হ্যাক হওয়া সাধের ফেসবুক আইডি ফিরে পাবেন। তবে শর্ত একটাই, সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

এম এম হক মাহমুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়