Cvoice24.com


যেসব নারী-পুরুষকে বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
যেসব নারী-পুরুষকে বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়

ইসলাম ধর্মে বিয়ের আইনগত, সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদা রয়েছে। ছেলে ও মেয়ের একসঙ্গে জীবন-যাপন ও সংসার-ধর্ম পালনকে ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনগত সুরক্ষা দিতেই বিবাহ প্রথার সূচনা হয়েছিল। ইসলামের ‍দৃষ্টিতে বিয়ের জন্য খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না। অন্যান্য চুক্তির মতো এতে দুইটি পক্ষ থাকে। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে একপক্ষ বিয়ের প্রস্তাব প্রদান এবং অন্যপক্ষ তা গ্রহণ করলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।

সব শ্রেণির নারী-পুরুষ একে অন্যের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। কাকে বিয়ে করা যায় আর কাকে বিয়ে করা যায় না, এ ক্ষেত্রে ইসলামে একটি মৌলিক নীতি আছে, যা এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

পুরুষ যেসব নারী বিয়ে করতে পারবে না : পুরুষদের জন্য প্রায় ১৪ শ্রেণির নারীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ হলেও তাদের সঙ্গে বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। কিন্তু এসব নারী ছাড়া অন্য নারীদের সঙ্গে ইসলামী শরিয়তের শর্ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ।

ওই ১৪ শ্রেণির নারী যথাক্রমে—১/ মা ২/আপন দাদি-নানি ও তাদের ঊর্ধ্বতন নারীরা ৩/সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন ৪/আপন মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে ও তাদের গর্ভজাত যেকোনো কন্যাসন্তান ও আপন ছেলেসন্তানদের স্ত্রী ৫/যে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলন সংঘটিত হয়েছে, তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী স্বামীর কন্যাসন্তান এবং স্ত্রীর মা—অর্থাৎ শাশুড়ি, নানি শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ি ৬/ফুফু—অর্থাৎ পিতার সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন ৭/খালা—অর্থাৎ মায়ের সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন ৮/ভাতিজি—অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের মেয়ে ও তাদের অধস্তন কন্যাসন্তান ৯/ভাগ্নি—অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে ও তাদের অধস্তন কন্যাসন্তান ১০/দুধ-সম্পর্কীয় মেয়ে, মেয়ের মেয়ে, ছেলের মেয়ে ও তাদের অধস্তন কোনো কন্যাসন্তান এবং দুধ-সম্পর্কীয় ছেলের স্ত্রী ১১/দুধ-সম্পর্কীয় মা, খালা, ফুফু, নানি, দাদি ও তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলারা ১২/দুধসম্পর্কীয় বোন, দুধবোনের মেয়ে, দুধভাইয়ের মেয়ে এবং তাদের গর্ভজাত যেকোনো কন্যাসন্তান ১৩/যৌনশক্তিহীন এমন বৃদ্ধা, যার প্রতি পুরুষের কোনো প্রকার আকর্ষণ নেই ১৪/অপ্রাপ্তবয়স্ক এমন বালিকা, যার প্রতি পুরুষের এখনো যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়নি। উল্লেখ্য, ১৩ ও ১৪ নম্বরে বর্ণিত মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ আছে। উপরোক্ত নারীরা ছাড়া পুরুষের জন্য অন্য কোনো মহিলার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ জায়েজ নয়। (সুরা নিসা, আয়াত : ২৩; তাফসিরে মাজহারি : ২/২৫৪)

নারীরা কোন কোন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা ও আলোচনা-

যেসব পুরুষের সঙ্গে নারীদের বিয়ে বৈধ নয় - নারী এমন ১৪ শ্রেণির পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে, যাদের সঙ্গে তাদের বিবাহ নিষিদ্ধ। যথা - ১/পিতা, দাদা, নানা ও তাঁদের ঊর্ধ্বতন পুরুষরা ২/সহোদর ভাই, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই ৩/শ্বশুর, আপন দাদা শ্বশুর ও নানা শ্বশুর এবং তাঁদের ঊর্ধ্বতন পুরুষরা ৪/ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্রসন্তান ৫/স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র ৬/ভাতিজা—অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের ছেলে ও তাদের অধস্তন কোনো ছেলে ৭/ভাগিনা—অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের ছেলে ও তাদের অধস্তন কোনো ছেলে ৮/চাচা—অর্থাৎ বাপের সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই ৯/মামা—অর্থাৎ মায়ের সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই ১০/দুধ-সম্পর্কীয় ছেলে, ছেলের ছেলে, দুধসম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত যেকোনো পুত্রসন্তান এবং দুধসম্পর্কীয় মেয়েদের স্বামী ১১/দুধ-সম্পর্কীয় বাপ, চাচা, মামা, দাদা, নানা ও তাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ ১২/দুধ-সম্পর্কীয় ভাই, দুধভাইয়ের ছেলে, দুধবোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যেকোনো পুত্রসন্তান ১৩/যৌনশক্তিহীন এমন বৃদ্ধ, যার মহিলাদের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই এবং তার প্রতি মহিলাদেরও কোনো আকর্ষণ নেই ১৪/অপ্রাপ্তবয়স্ক এমন বালক, যার এখনো যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়নি। উল্লেখ্য, ১৩ ও ১৪ নম্বরে বর্ণিত পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ আছে।

নারীর জন্য উপরোক্ত পুরুষরা ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েজ নয়। সুতরাং চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, মামাতো ভাই, দেবর, ভাশুর, খালু, ফুফা, চাচাতো শ্বশুর, উকিলবাপ, ধর্মবাপ, ধর্মভাই, দুলাভাই, বেয়াই, ননদের জামাই প্রমুখের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে বিধি-নিষেধ থাকলেও তাদের সঙ্গে বিয়েশাদি জায়েজ। স্ত্রীর বর্তমানে বা তার ইদ্দতের সময় তার বোনকে বিয়ে করা হারাম। (সুরা নুর, আয়াত : ৩১; তাফসিরে মাজহারি : ৬/৪৯৭-৫০২, মাআরেফুল কোরআন : ৬/৪০১-৪০৫, হেদায়া : ২/৩০৭, ফাতহুল কাদির : ২/১১৭)  

সিভয়েস/এস.আর

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়