Cvoice24.com


দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে সেন্টমার্টিনে

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নেমেছে সেন্টমার্টিনে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি শত শত পর্যটকের পদভারে মুখর থাকে নারিকেল জিঞ্জিরাখ্যাত এই দ্বীপ। এমন নীল আকাশ আর সাগরের স্বচ্ছ ঢেউ খেলা করে সেন্টমার্টিনের সৈকতে। তীরে বাঁধা নৌকা, নান্দনিক নারিকেল গাছের সারি, সব মিলে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের হাতছানি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।

ব্যস্ত জীবনে একটু প্রশান্তি পেতে প্রতিদিন এখানে ভিড় জমায় ভ্রমণ পিপাসুরা। শীতের শুরুতেই পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যে তুলনায় ভিড় বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি এ দ্বীপে। অভিযোগ রয়েছে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ আর পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে অনেকে।

তবে, ট্যুরিস্ট পুলিশের দাবি, সবসময়ই পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তাবলয় থাকে সেন্টমার্টিনে। এ দ্বীপে পর্যটক বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো পদক্ষেপ চায় স্থানীয়রা।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। এতে তিন দিকের ভিত শিলা, যা জোয়ারে তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। ভাটার সময় এই দ্বীপের আয়তন ১০-১৫ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে থাকে। দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। পূর্ব-দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তুপ আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে পেজালা (অ্যালগি) নামে পরিচিত একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল এ দ্বীপে দেখা মেলে। এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে, তবে লাল পেজালা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়। 

এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে সপঞ্জ, শিলকাঁকড়া, সন্ন্যাসী শিলকাঁকড়া ও লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল কোরাল, রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ ও উড়ক্কু মাছ ইত্যাদি। এসবের কারণে অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে যায়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে পর্যটকের উপস্থিত বাড়ে সেন্টমার্টিনে।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের টেকনাফ ইনচার্জ মো. শাহ আলম জানান, শীত মৌসুম শুরু হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখন সেন্টমার্টিনে ঢল নেমেছে এবং প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বাড়ছেই।

প্রতি শুক্রবারে পর্যটকের সংখ্যা বেশি থাকে। অনেকেই জাহাজের টিকেটও পায় না। সরকারি বন্ধের দিনে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যায়।  প্রতি বছর দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে আসে। তারা সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপলব্ধি করে। কোনো কোনো পর্যটক ধারণা করেন, সেন্টমার্টিন বিশ্বের সেরা দ্বীপগুলোর মধ্যেই অন্যতম।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খান বলেন, দ্বীপের মানুষ সবসময় পর্যটকবান্ধব। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নিরাপদে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারছেন। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে ৫-৬টি জাহাজ যোগে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজারের বেশি পর্যটক এ দ্বীপ ভ্রমণে আসেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা তাদের ইচ্ছেমতো ঘুরে আনন্দের মধ্যেই নিরাপদে বাড়ি ফিরছেন। এমন কি তাদের এখানে থাকাকালীন কোনো সমস্যাতে পড়তে হচ্ছেনা। 

এদিকে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত করার পাশাপাশি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আগামী বছরের পহেলা মার্চ থেকে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করায় পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনটাই বলছেন, পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত পর্যটক দ্বীপের ভারসাম্যের জন্য হুমকি এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে বলে পরিবেশ সমীক্ষায় উঠে আসার পর সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে পর্যটনে নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা হোটেল সী-প্রবালের মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘এখানে রাত্রীযাপন যদি একদমই বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভ্রমণপিপাসুরা খুবই দুর্ভোগে পড়বে।’ কারণ ছয় ঘণ্টা জার্নি করে সেন্টমার্টিন এসে একদিনও থাকতে না পারলে, এটা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয় পর্যটকদের। এছাড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে।

সেভ দ্যা নেচারের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব যে উপায়ে তারা পর্যটনকে সমৃদ্ধ করেছে, সেই আদলে সেন্টমার্টিনকে গড়ে তুলতে পারলে দেশ রক্ষা করে পর্যটন শিল্প রক্ষা হবে বলে আমি মনে করি। কারণ পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণে খুবই আগ্রহী।  

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পর্যটক সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ অনেক কার্যক্রম চালু করেছে। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সৈকতে পুলিশ টহল রয়েছে। তার সাথে ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে কন্ট্রোল রুম। এতে করে যেকোনো সমস্যায় পর্যটকরা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে।

সিভয়েস/এএইচ

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার অফিস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়