Cvoice24.com


ডাক্তার নন! চেম্বার বসিয়ে চোখের চিকিৎসা চালান তিনি

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮
ডাক্তার নন! চেম্বার বসিয়ে চোখের চিকিৎসা চালান তিনি

ফাইল ছবি

মোহাম্মদ হারুন খান। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপটোমেট্রি হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন অপটোমেট্রি হয়েও তিনি শহরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখে আসছেন। নিজেকে পরিচয় দেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ সার্জন হিসেবে। 

কোন ধরনের চিকিৎসকের সনদ ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ভারতের বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভূয়া ডিগ্রি নামের সাথে ব্যবহার করছেন। চমকপ্রদ ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফেস্টুন ও লিফলেট ব্যবহার করে রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছেন তিনি।

আগাম মাইকে প্রচার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চশমার দোকানে চেম্বার বসিয়ে রোগী দেখতেন তিনি। 

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কলেজ গেইটে পুস্প অপটিকস ও সীতাকুণ্ড চশমা ঘর অপটিকসে রোগী দেখছেন তিনি।

রোগী প্রতি ফি নিচ্ছেন ২০০ টাকা। কিছু অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ লেখার বিনিময়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানায়, এই চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন শত শত রোগী। চোখের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন। 

ডিগ্রি ছাড়াও চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত হারুন খান সিভয়েসকে বলেন, আমি রোগী দেখিনা রোগীদের চোখের চশমা দিয়ে থাকি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ সিভয়েসকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগের  ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। যদি কেউ ডাক্তারের ভূয়া সনদ দিয়ে চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যায় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। 

চট্টগ্রাম চক্ষু চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাসুদ পারভেজ সিভয়েসকে বলেন, চক্ষু চিকিৎসকের নামে ভূয়া চক্ষু চিকিৎসক চট্টগ্রামে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জন অফিসে একটি তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রামে অনেক ভূয়া চিকিৎসক আছে যারা চিকিৎসা সেবা দেয়ার নাম করে সাধারণের ক্ষতিসাধণ করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দীকী সিভয়েসকে বলেন, যারা চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ১) ‘নিবন্ধনকৃত মেডিকেল চিকিৎসক কিংবা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করিবেন না যাহার ফলে তাহার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেহ মনে করিতে না পারে, যদি না উহা কোন স্বীকৃত মেডিকেল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা হইয়া থাকে। 

ন্যূনতম এমবিবিএস কিংবা বিডিএস ডিগ্রী প্রাপ্তগণ ব্যতীত অন্য কেহ তাহাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করিতে পারিবে না। ২- এর উপধারা ১ এর বিধান লঙন করিলে উক্ত লঙন হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি তিন (৩) বৎসর কারাদণ্ড বা এক (১) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডনীয় হইবেন, এবং উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকিলে, প্রত্যেকবার উহার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে, বর্ণিত দণ্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দণ্ডনীয় হইবেন।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১৯ মে সন্দ্বীপে ভূয়া ডাক্তার আরিফ বিল্লাহ ও তার সহযোগীকে আটক করে পুলিশ।

-সিভয়েস/আরএইচ/এসএ/এমইউ

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়