জেএমবি’র বোমা হামলা, ১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৮
জেএমবি’র বোমা হামলা, ১৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ

ছবি : প্রতীকী

২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ফটকে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। দীর্ঘ ১৪ বছরেও শেষ হয়নি এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার কাজ। সরকারি কৌঁসূলি না থাকায় হচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ। বর্তমানে এই মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। এই অবস্থায় মামলার ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর আদালত ফটকে চালানো জেএমবির বোমা হামলায় দায়ের করা মামলাটি সম্প্রতি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জঙ্গি সংশ্লিষ্ট এবং বিস্ফোরক আইনের মামলাগুলোর কথা চিন্তা করে সরকার প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে একটি করে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে।
দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে জেএমবি’র বোমা হামলা মামলাটি নানা কারণে আটকা পড়েছিল। 

কখনো সাক্ষীর জন্য, কখনো-বা বিচারক না থাকায় মামলাটির বিচারকাজে গতি পায়নি। ফলে ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ মামলায় প্রায় ২৮ মাসে একজন সাক্ষীও আদালতে সাক্ষ্য দেয়নি। 

আরও জানা গেছে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিচারক না থাকার করণে মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আটকা ছিল।

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন স্থাপিত সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে পুরানো জেএমবি’র বোমা হামলা মামলাটি স্থানান্তরে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তা আবার নিভে গেছে। এবার সরকারি কৌঁসূলি (প্রসিকিউটর) না থাকায় মামলাটি নিয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করতে সরকারি কৌঁসূলির প্রয়োজন রয়েছে। এমন অবস্থায় বিচারক থাকার পরও শেষ করা যাচ্ছে না চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার কাজ।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাটির অন্যতম আসামি জেএমবি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে গ্রেফতার করেছিল ভারতীয় পুলিশ। আরও জানা গেছে, মামলাটির ২ নম্বর আসামি ভারতে গ্রেফতার হওয়া বোমারু মিজান। মামলার আরেকজন দুর্র্ধর্ষ আসামি মো. জাবেদ ইকবাল। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকাল বেলা। হঠাৎ আদালত ফটকে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেদিন পুলিশের তল্লাশি চৌকির সামনে বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সদস্যরা। ঘটনাস্থলে মারা যায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও বিচারপ্রার্থী ফুটবলার শাহাবুদ্দীন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ প্রায় ১০ জন। 

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে জেএমবি’র চালানো বোমা হামলার ধারাবাহিকতা ছিল আদালত ফটকের ওই হামলা। 

সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হাসনাত সিভয়েসকে বলেন, মামলাটির কেসডকেট হাতে পেয়েছি। আগামী ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিনও ধার্য্য রয়েছে। 

পেশকার জানান, বিচারক নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই আর। একমাত্র ঝামেলা সরকারি কৌঁসূলি নিয়ে। কৌঁসুলি নিয়োগ হলে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে থাকা সবকটি মামলা পুনরায় সচল হবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আদালতের মতো জায়গায় জেএমবি’র বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচারকাজ এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও শেষ হয়নি। কখনো সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে পুলিশের ব্যর্থতা, কখনো বিচারক শূন্যতা, আবার কখনো সরকারি কৌঁসুলি না থাকা। 

মামলাটির পেছনে লেগেই আছে একটার পর একটা সমস্যা। এসব কারণে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর এ অবস্থা বিচার কাজ শেষ করতে এসব অজুহাত মেনে নেয়া যায় না। আশা করি, সরকার দ্রুত কৌঁসুলি নিয়োগ দিয়ে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর বিচার কাজ শেষ করবে।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়