নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
সরকারি কৌঁসুলি সংকটে মামলায় ধীরগতি

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৮
সরকারি কৌঁসুলি সংকটে মামলায় ধীরগতি

নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য চট্টগ্রাম জেলায় নতুন করে ৪টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। আগের তিনটি এবং নতুন চারটি মিলে মোট ৭টি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে চট্টগ্রাম আদালতে। এই ৭টি ট্রাইব্যুনালের প্রত্যেকটিতে সরকার নিয়োগ দিয়েছে স্বতন্ত্র বিচারক। বিচারক নিয়োগ হলেও সবগুলো ট্রাইব্যুনালে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নিয়োগ না হওয়ায় মামলা পরিচালনায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। 

জানা গেছে, ৭টি ট্রাইব্যুনালের তিনটিতে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি সরকারি কৌঁসুলি। ফলে অপরাধ প্রমাণ এবং সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ বিচার শুরুর আগে আসামির জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন বিচারকরা।
চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি  থানার বাসিন্দারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন মহানগর এলাকার ১৬ থানার বাসিন্দারাও।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, আত্মহত্যার প্ররোচনা, যৌতুকের জন্য হত্যা এবং যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালিত হয়। এ মামলাগুলোর ভিকটিম হচ্ছে নারী ও শিশুরা। ফলে এ ট্রাইব্যুনালে থাকা প্রত্যেকটি মামলা স্পর্শকাতর।

আদালত সূত্রে আরো জানা গেছে, ৭টি ট্রাইব্যুনাল মিলে স্পর্শকাতর এসব মামলার সংখ্যা বর্তমানে ১৫ হাজারেরও বেশি।

আগে চট্টগ্রামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ছিল তিনটি। সম্প্রতি সরকার আরো চারটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করলে মোট ট্রাইব্যুনাল দাঁড়ায় সাতটিতে। এই সাতটি ট্রাইব্যুনালের তিনটিতে থাকলেও বাকি চারটিতে ছিল না সরকারি কৌঁসুলি। এরই মধ্যে গত ১৮ নভেম্বর সরকার চারটির একটিতে নিয়োগ দেয় কৌঁসুলি। এ নিয়ে বর্তমানে চারটি ট্রাইব্যুনালে রয়েছে সরকারি কৌঁসুলি। বাকি তিনটি ট্রাইব্যুনালে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৪, ৫ এবং ৬ এ শুরু থেকেই নেই সরকারি কৌঁসুলি। প্রায় ৭ মাস ধরেই বন্ধ এ তিনটি ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ। ফলে শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও হচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ। জামিন শুনানিতে কৌঁসুলি উপস্থিত না থাকায় আসামিরা কৌশলে এবং সহজে পেয়ে যাচ্ছেন জামিন।

এদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম। গত ১৮ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং কর্তৃক তিনি এ নিয়োগ পান।

এ বিষয়ে খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশুদের বিচার প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘদিন পিপি না থাকায় সাক্ষী হাজির বা সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছিল না। এখন সরকার আমাকে গুরুত্বপূর্ণ এ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দিয়েছে। এখন থেকে এই ট্রাইব্যুনালে নিয়মিত সাক্ষী হাজির করা হবে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি এমএ নাসের বলেন, চারটি ট্রাইব্যুনালে পিপি না থাকায় অপরাধ প্রমাণ থেকে শুরু করে সাক্ষী হাজির এবং সাক্ষ্য গ্রহণ কোনোটিই সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত ১৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ পিপি নিয়োগ হওয়ায় আশার আলো দেখা দিয়েছে। আশা করি শীঘ্রই বাকি তিনটি ট্রাইব্যুনালেও পিপি নিয়োগ হবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে ৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত হওয়ায় বিচারপ্রার্থী ও বিচারকাজে সংশ্লিষ্টদের অনেক বেশি উপকার হয়েছে। ৭টি ট্রাইব্যুনালের ৩ টিতে সরকারি কৌঁসুলি না থাকায় বিচারকাজে বিলম্ব দেখা দিয়েছে। আশা করি দ্রুত ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালগুলোতে সরকার কর্তৃক কৌঁসুলি নিয়োগ হবে।

-সিভয়েস/এসএ/এমইউ

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়