Cvoice24.com


চিহ্নিত ১৬ হাজার তামাক বিক্রয় স্পটে ‘বেইজ লাইন সার্ভে’ শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৮
চিহ্নিত ১৬ হাজার তামাক বিক্রয় স্পটে ‘বেইজ লাইন সার্ভে’ শুরু হচ্ছে

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে তামাকমুক্ত মডেল নগরীতে পরিণত করা এবং তামাকজনিত মৃত্যু থেকে চট্টগ্রামবাসীকে রক্ষা করে স্বাস্থ্যকর নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। 

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা)’র উদ্যোগে ‘পিপলস জুবিল্যান্ট এনগেজমেন্ট ফর টোব্যাকো-ফ্রি চিটাগাং সিটি’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১ ওয়ার্ড জুড়ে জরিপ চালিয়ে ১৬ হাজার ৫৯টি তামাক বিক্রয় কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সিগারেট, বিড়ি, তামাক বা সংশ্লিষ্ট পণ্য-দ্রব্য বিক্রি করার সময় আইন অমান্য করে বিজ্ঞাপন, তামাক পণ্যের প্রদর্শন বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কি-না প্রকল্পে এ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করা হয়েছে। 

আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে চিহ্নিত স্পটগুলোতে এবার বেইজ লাইন সার্ভে শুরু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিটা’র সাথে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ইলমা সম্পৃক্ত থাকবে। 

কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। ইতোমধ্যে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 

আগামী ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। তামাকমুক্ত নগরী গড়ার এই প্রকল্পে নগরের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী হিসেবে সম্পৃক্ত করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে বিভিন্ন সংগঠন, এসোসিয়েশন, সোশ্যাল মিডিয়া’সহ অন্যান্য গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করা সিদ্ধান্ত রয়েছে। 

তামাক বিক্রয় কেন্দ্রের ধরণ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থার জরিপকৃত তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরীতে রাস্তার পাশে তামাক বিক্রেতা রয়েছে ৩ হাজার ৩৯৪ জন, চায়ের দোকান ৪ হাজার ৩০৫টি, মুদি বা মনোহারী দোকান ৫ হাজার ৮৭৯টি, সুপার সপ ৯২৪টি, শুধুমাত্র তামাকের দোকান ৬৬৭টি, রেস্টুরেন্ট ১৯৬টি, ভাসমান তামাক বিক্রেতা রয়েছে ৬৯৪ জন। সবমিলিয়ে ১৬ হাজার ৫৯টি তামাক বিক্রয় কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া লাইসেন্সবিহীন বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১২ হাজার ১৫৬টি। চিহ্নিত এই স্পটগুলোতে বেইজ লাইন সার্ভে পরিচালনার পর তামাক বিজ্ঞাপন, প্রচারণা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় নিষেধাজ্ঞা বিধি বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সংশ্লিষ্ট আইন শৃংঙ্খলা প্রশাসন’সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করা হবে। 

প্রকল্প বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, তামাকমুক্ত নগরী গড়ার লক্ষ্যে এই অর্থ বছরে বার্ষিক ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে এই বাজেট ব্যয় করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে একজন ফোকাল পার্সন মনোনীত করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন অমান্যকারীদেরকে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। তামাক বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে জনসচেতনতামূলক নানামূখী প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে তামাক নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক পাঠ্য সংযুক্ত করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদেরকে  গণমাধ্যম ও স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।এক্ষেত্রে  সংশ্লিষ্টদেরকে কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। 

এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক সংস্থা সিটিএফকে’র কান্ট্রি প্রতিনিধি ড. শরীফুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীতে তামাকের ব্যবহার জনিত অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবসমাজ (নারী-পুরুষ) প্রকল্পের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতন হবে। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সিটিজেন গ্রুপ এবং এসোসিয়েশনের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫’র যথাযথ প্রয়োগ শুরু হবে এবং ধুমপান, তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিয়ন্ত্রণে জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। 

আজ বিকালে চসিক কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিটা’র উদ্যোগে এক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ২০১৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ মতে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের একটি পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। 

পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে; ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ ধুমপান করে; ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে; পরিবারে ৪ কোটি ৮ লাখ এবং কর্মস্থলে ৮১ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধুমপানের শিকার হচ্ছে। যা খুবই পরিতাপের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

জেসমিন সুলতানা পারুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ সভায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চসিক প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা, চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, ক্যাব সভাপতি এসএম নাজের হোসেন ও প্রদীপ আচার্য্য বক্তব্য রাখেন। 

সিভয়েস/এস.আর 

উজ্জ্বল দত্ত 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়