Cvoice24.com


স্নাতক/স্নাতকোত্তরে বিভাগ নির্বাচন : কেন পড়ব ‘দর্শন’

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১১ নভেম্বর ২০১৮
স্নাতক/স্নাতকোত্তরে বিভাগ নির্বাচন : কেন পড়ব ‘দর্শন’

এইচএসসি তথা কলেজ পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেননা, কোন পথে এগুতে হবে? সাবজেক্ট সিলেকশনে হিমশিম খেতে হয়। এক অজানা পথে হাঁটতে গিয়ে প্রায় শিক্ষার্থী পরামর্শ বা সহযোগিতার হাত খুঁজেন। বিশেষ করে ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোন বিষয়টাতে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। এরমধ্যে ‘দর্শন’ বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় অচেনা এক পরিবেশ/প্রতিবেশের মোকাবেলা করতে হয়। এই সম্পর্কে একটা সহজ সমীকরণ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুনির হোসেন তালুকদার।

কী পড়ানো হয় : 
প্রত্যেক মানুষেরই তার নিজেকে জানা প্রয়োজন। নিজেকে জানার পদ্ধতিটা কী? আমি কে, আমি কীভাবে এলাম, আমাদের জগৎ কীভাবে সৃষ্টি হলো ইত্যাদি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ বলছি কারণ, আমরা নিজেদের যেভাবে জানি, তার ওপর ভিত্তি করেই জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিই। কেউ হয়তো বিজ্ঞানী হবে, কেউ পরিসংখ্যানবিদ হবে, কেউ হবে অর্থনীতিবিদ। কিন্তু এই অর্থনীতি, পরিসংখ্যান বা বিজ্ঞানের লক্ষ্য কী? সে লক্ষ্য সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কতটা কাজে লাগবে, একজন অর্থনীতিবিদ বা একজন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি কী রকম হবে, কিংবা প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য কী হবে—আমরা যদি এই পুরো বিষয় সম্পর্কে একটা বিচারমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই, তাহলে আমাদের দর্শন পড়া উচিত।

পাশাপাশি একজন যুক্তিশীল, নান্দনিক এবং একজন নৈতিক মানুষ তৈরির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সেসবই আমরা দর্শনের শিক্ষার্থীদের শেখাতে চাই।

ভবিষ্যৎ কী?

বিষয় হিসেবে দর্শনের ভবিষ্যৎ অন্য যেকোনো বিষয়ের সমান কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি উজ্জ্বল। সমান বলছি কারণ, যারা দর্শন পড়ে, তারা সবাই তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ভালো করে। আর বেশি বলছি এই কারণে যে কাউকে পরিপূর্ণ একজন ব্যক্তি হয়ে উঠতে হলে সবধরনের সমসাময়িক ঘটনাবলির মধ্যে যে সংযোগ, সেটা ধরতে শিখতে হয়। এ জন্য দরকার একটি দার্শনিক মন। হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডের মতো বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে চোখে পড়বে ‘দর্শন ও ব্যবসা’, ‘দর্শন ও কম্পিউটার প্রকৌশল’ ইত্যাদি বিষয় সেখানে আছে। কারণ, যে যত বেশি ভাবনার গভীরে যেতে পারে (ক্রিটিক্যাল মাইন্ডেড), সে তত বড় বিজনেস এক্সিকিউটিভ কিংবা তত বড় কম্পিউটারবিজ্ঞানী হয়। আর এই ‘ক্রিটিক্যাল মাইন্ড’–এর শিক্ষা দেওয়া হয় দর্শন বিভাগে। 

দর্শনের আরেকটা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বিষয় হলো ‘প্রায়োগিক নীতিবিদ্যা’। এখন কিন্তু আমরা শুধু দক্ষ বিজ্ঞানী বা দক্ষ প্রশাসকই চাই না, আমরা চাই একজন নীতিমান বিজ্ঞানী বা প্রশাসক। 

তা ছাড়া এখন নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে বাজারে। এগুলো আমাদের জন্য অনেক সুফলের পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিও বয়ে আনছে। এসব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সতর্কতামূলক নীতি গ্রহণ করতে পারি, সেগুলো কিন্তু দর্শনেই গবেষণা করা হয়। আসলে দর্শনের ব্যাপ্তি এত বেশি যে একে যেকোনো বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করা যায়।

ক্যারিয়ার কোথায়?

একজন দর্শনে স্নাতক ব্যক্তি ভালো প্রশাসক হতে পারবে, ভালো সম্পাদক হতে পারবে। বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে যেখানে জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন হবে, সেখানে ভালো করতে পারবে। হতে পারবে ভালো নীতিনির্ধারক।

চাকরির বাজারের ক্ষেত্রে এখন মূলত এমন শিক্ষার প্রয়োজন, যা ব্যবহারিক। তবে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এই কাল্পনিক ক্ষমতা থাকাও জরুরি। আগে ধারণা করা হতো, দর্শন শুধু অ্যাবস্ট্রাক্ট বা কাল্পনিক। ধর্ম, নৈতিকতা, সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছুর সঙ্গেই দর্শন সম্পৃক্ত। সবাই তো ফলিত জ্ঞান পড়বে না। এই মৌলিক জ্ঞানগুলো অর্জনের জন্য দর্শন পড়া উচিত।

একটা সময়ে শিক্ষার্থীদের ‘বিজনেস’ পড়ার ঝোঁক ছিল। এখন দিন দিন মানুষ শিখতে চাচ্ছে, আমাদের সিদ্ধান্তগুলো আমরা কত দ্রুত নিতে পারি। দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে বড় পদে আছে দর্শনের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোতে বর্তমানে ‘ইথিসিস্ট’ বা ‘ইথিকস অ্যাডভাইজার’ হিসেবে অনেককে নিচ্ছে। ক্ষেত্রটি পুরোপুরি দর্শনের শিক্ষার্থীদের জন্য। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা গবেষণার কাজ করছেন অনেকে। এভাবেই দর্শন পাঠ আমাদেরকে সমসাময়িক উপযুক্ততায় এক গ্রহণযোগ্য অবস্থান উপহার ‍দিতে পারে। 

কারা পড়বে?

দর্শন তারই পড়া উচিত, যার একটা বিষয় সম্পর্কে গভীরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। কেউ হয়তো গণিত বোঝে। কিন্তু এই গণিত কীভাবে এল, তা জানতে চাইলে শুধু গণিত বুঝলে হবে না, আরও একটু প্রচেষ্টা লাগবে। এ রকম শুধু গণিত নয়, যেকোনো বিষয়েই যার এ ধরনের কৌতূহলী মন আছে, যে নিজের ধারণা-অবস্থান দিয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, যে যুক্তিশীল, নৈতিক, সুন্দর মনের মানুষ হতে চায়, সর্বোপরি, কোনো বিষয়ের গভীরে যে যেতে চায়, তারই দর্শন পড়া উচিত। এভাবে একজন উচ্চমার্গীয় মানুষ তৈরিতে, আলোকিত সমাজ গঠন ও অদূর ভবিষ্যতকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজন দার্শনিক ভিত্তিমূল যা দর্শনের শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে দিতে পারেন সহজেই। 

সিভয়েস/এস.আর 

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়