Cvoice24.com


প্রতিবছর ১০ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করবে জুনিয়র চেম্বার: মাশফিক আহমেদ (ভিডিও সহ) 

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৮
প্রতিবছর ১০ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করবে জুনিয়র চেম্বার: মাশফিক আহমেদ (ভিডিও সহ) 

ছবি : সিভয়েস

মাশফিক আহমেদ। সফল তরুণ উদ্যোক্তা। নিজ মেধা ও যোগ্যতায় সফলভাবে পালন করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের সভাপতির দায়িত্ব। সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন সিভয়েস এর। ব্যক্ত করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে উঠার নেপথ্য কথা, সেই সাথে তুলে ধরেছেন দেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েস প্রতিবেদক হিমাদ্রী রাহা। 

সিভয়েস- আপনি একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। কিভাবে এই অবস্থানে এলেন আর কেনইবা তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে গড়ে তুললেন? সবার আগে আপনার শিক্ষা জীবন দিয়েই শুরু করুন। 

মাশফিক আহমেদ- আমি চট্টগ্রামেরই ছেলে। নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে আমি ও লেভেল এবং চিটাগং গ্রামার স্কুল থেকে এ লেভেল শেষ করি। এরপর ইংল্যান্ডের কুইন্স মেরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি ও সাসটেইনেবল এনার্জি নিয়ে এমএসসি করি। এরপরই আমি দেশে চলে আসি। দেশে এসে আমি কিউবি ওয়ারলেস ইন্টারনেট সংযোগের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা শুরু করি। চট্টগ্রামে এটি আমিই প্রথম শুরু করি। এরপর ব্যবসাটি আমার এক পার্টনারকে বুঝিয়ে দিয়ে আবারো ইংল্যান্ডে চলে যাই। কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির জন্য সিভি দিয়ে রেখেছিলাম। 

অবশেষে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিমেন্স’এ প্রায় ৪০ হাজার জনকে টপকে সেখানের গুটি কয়েকজনের মধ্যে আমিও সুযোগ পাই। সেখানে আমি ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করি। পরে চাকরির পাশাপশি সেখানেও আমি ব্যবসা শুরু করার মনস্থির করি। যেহেতু দেশেও আমি সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছি, কিছুদিনের জন্য তাই সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডেও আমি ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে দেখলাম সেখানে কাজের লভ্যাংশ আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমি দেশে ফিরে আসবো। অতঃপর দেশে ফিরে আবারো ব্যবসা শুরু করি। 

সিভয়েস- আপনি বললেন ইংল্যান্ডে ব্যবসার লভ্যাংশ কম। অথচ তারা তো উন্নত দেশ আর আমরা উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত দেশ হওয়া সত্তেও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় সেখানে ব্যবসার লভ্যাংশের এতো পার্থক্য কেন? 

মাশফিক আহমেদ- দেখুন বিগত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে আমাদের জিডিপি ৭ শতাংশেরও বেশি। উন্নত দেশগুলোতে জিডিপির তারতম্য ঘটলেও এখানে তা ঘটেনি। এর পেছনে কারণও রয়েছে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে আমরা শ্রমবাজার অত্যন্ত সুলভ। এটাও প্রধান একটা কারণ। এই সুলভ শ্রমবাজারই বিশ্ববাজারে লভ্যাংশের পার্থক্যটা গড়ে দিচ্ছে যেটি আমাদের জন্য খুব ভালো একটি বিষয়।  

সিভয়েস- বিদেশের সমৃদ্ধ জীবন ছেড়ে কেন দেশে ফিরে এলেন? 

মাশফিক আহমেদ- বিদেশের সমৃদ্ধ জীবন আমাকে কখনোই টানেনি। আমার সবসময় ইচ্ছে ছিলো দেশে ফিরে দেশের শ্রমবাজার নিয়েই কাজ করবো। আপনি বিদেশে ব্যবসা করে যে লভ্যাংশ পাবেন তার থেকেও বহুগুন লাভ এখানে করা যায়। এতে করে দেশের শ্রমিকরাও আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। এসব চিন্তা করেই আমি দেশে ফিরে আসি। কারণ আমাদের দেশের মতো সুলভ শ্রমবাজার আর কোথাও নেই।  

সিভয়েস- বর্তমানে আপনি কি ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন? 

মাশফিক আহমেদ- আমি মূলত টেক্সটাইল ব্যবসার সাথে জড়িত। টেক্সটাইল বলতে গার্মেন্টেস এর ব্যকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি। আমরা ৮০ হাজার স্পিন্ডের একটি স্পিনিং মিল অপারেট করি। এছাড়া দিনপ্রতি ১৫০ টন ধারণ ক্ষমতার একটি এয়ারডাইং অপারেট করি। আমরা ডেনিম ফেব্রিক উৎপাদন করি। এছাড়াও শার্টিং স্যুটিংয়ের সাথেও জড়িত। 

সিভয়েস- তরুণ যারা এই গার্মেন্টস শিল্পে আসতে চায় তার জন্য কি পরামর্শ থাকবে আপনার? 

মাশফিক আহমেদ- আমাদের গার্মেন্টস শিল্প অনেক সমৃদ্ধ। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে যা আমি আগেও বলেছি তা হলো সুলভ শ্রম বাজার। এই সুলভ শ্রম বাজারের কারণে বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের অর্ডার আমাদের দেশে চলে আসছে। তরুণ যারা এই পেশায় আসতে চায় তাদের এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। 

সিভয়েস- আপনি বর্তমানে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল চট্টগ্রামের সভাপতি। তরুণদের নিয়েই আপনাদের কর্মকান্ড বিস্তৃত। দেশে নতুন তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে আপনারা কি কি কাজ করে যাচ্ছেন? 

মাশফিক আহমেদ- বেশিরভাগ তরুণরাই বলে থাকে যে, আমি তো ব্যবসা করবো কিন্তু টাকা পাবো কই? আবার ব্যাংকগুলোতেও তো লোন সুবিধা নিতে গেলে নানা ঝামেলা। তবে আমার মতে অর্থ সংস্থান থেকেও বড় বিষয় হলো বুদ্ধি থাকতে হবে। বুদ্ধি থাকলে অর্থ আসবেই। ব্যবসা করার জন্য সবসময় যে ব্যাংকেই যেতে হবে তা নয়। কেউ কেউ পরিবার থেকে টাকা নিচ্ছে। কেউ আত্মীয় স্বজন কিংবা বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তবে হ্যা, এই সুবিধা তো সবাই পায় না। তাই এবছর থেকে আমরা জুনিয়র চেম্বার একটা উদ্যোগ নিয়েছি যে, প্রতিবছর ১০ জন তরুণকে সাবলম্বী করে তুলবো। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজন তরুণের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমরা তাদের নিয়ে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলোর কাছে যাবো। তাদের কাছে তরুণদের ব্যাসায়িক প্ল্যানগুলো তুলে ধরবো। এরপর তাদের কাছে প্রস্তাব রাখবো যেন তারা এসব তরুণদের ব্যবসায় ইকুইটি পার্টনার হিসেবে ইনভেস্ট করে। একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি বা প্রতিষ্ঠান যদি এসব তরুণদের ব্যবসায় সহযোগিতা করে নিঃসন্দেহে এটা একটা বিশাল ব্যাপার হবে। সেই সাথে তরুণরাও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। 

সিভয়েস- সবশেষ প্রশ্ন, একজন তরুণ উদ্যোক্তা হতে গেলে সবচেয়ে কোন বিষয়টা জরুরি? 

মাশফিক আহমেদ- ইচ্ছা, সততা আর বুদ্ধি এই তিন বিষয়য়ের সমন্বয় ঘটলে কোন তরুণকেই দমিয়ে রাখা যাবেনা। উদ্যোক্তা হতে গেলে এই তিনটি বিষয়ই জরুরি। 

সিভয়েস- আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতোক্ষণ সময় দেয়ার জন্য। 

মাশফিক আহমেদ- আপনাকেও ধন্যবাদ, সেই সাথে সিভয়েস’র সকল পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

-সিভয়েস/এমডিকে/এমইউ

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়