Cvoice24.com

তাসলিমা নাসরিনের প্রশ্ন
মাসুদা ভাট্টি যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ অক্টোবর ২০১৮
মাসুদা ভাট্টি যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?

ফাইল ছবি।

মাসুদা ভাট্টি যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে? সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ভীষণ রকম চরিত্রহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। রোববার (২১ অক্টোবর) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বেশ কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত নাম সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি। গত ১৬ অক্টোবর রাতে ৭১ টেলিভিশনে মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় ‘৭১ জার্নাল’ টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইলে ব্যারিস্টার মইনুল মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে এবং লিখিতভাবে ক্ষমা চান। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। আদালত ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পাশাপাশি মইনুলের একই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আজ সকালে তাঁর বিরুদ্ধে জামালপুরের আদালতে ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন যুব মহিলা লীগের জামালপুর শাখার আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমীন লিটা। আদালত সে মামলা আমলে নিয়েও ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

মানহানির ওই দুই মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে আজ বিকেলে পাঁচ মাসের জন্য আগাম জামিন দেন বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

সেই মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে এবার নিজের ফেসবুকে বোমা ফাটালেন লেখিকা তাসলিমা নাসরিন। তাঁর লেখা নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো :

‘কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তাঁর চরিত্র, কী তাঁর আদর্শ আমি জানি না, তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ভীষণ রকম চরিত্রহীন মহিলা। চরিত্রহীন বলতে আমি কোনওদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। চরিত্রহীন বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি মিথ্যুক, অতি প্রতারক, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ, অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।

মহিলাটির জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, 'মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিল। পাকিস্তানির সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পার ওকে। ওর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে একটা চিঠি লিখে দাও। লিখে দাও মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশে তোমার পাব্লিশার ছিল, তোমার জন্য আন্দোলন করেছে। ও যদি এখন দেশে ফিরে যায়, ওকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা'।

আমি বললাম, 'মহিলাকে আমি চিনিই না। আর আপনি বলছেন ও আমার পাবলিশার ছিল? আমি মিথ্যে বলি না। আমি মিথ্যে কথা বলতে পারব না।' এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাব জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।

তারপর কী হলো? তারপর ২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড 'ক' যখন বাংলাদেশে বেরোলো, আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদি গোষ্ঠি উন্মাদ হয়ে উঠল আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য, আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালি তো দিতেই লাগল, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করল, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি। আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ প্রচুর কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনওদিন করেনি। ক বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে শরীরে ঘিনঘিনে ঘা ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন।

মাসুদাভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?

আজ দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে লড়ছেন কারণ কেউ তাকে চরিত্রহীন বলেছে। যত অশ্লীল শব্দ বাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে আশির দশক থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনও বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনও সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে কোনওদিন দেখিনি! আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হলো, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হলো, আমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে দিনের পর দিন মিছিল হলো, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করলো, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনও সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দ করেননি। সে তো করেনইনি, বরং যে সব পত্রিকায় আমি নিয়মিত কলাম লিখতাম, সে সব পত্রিকার বিশিষ্ট সম্পাদকরা আমার কলাম ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনও বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। নারী সাংবাদিকরা আজ মাসুদা ভাট্টির পক্ষে প্রেস কনফারেন্স করছেন। নারীর সমানাধিকারের পক্ষে প্রায় ৪০ বছর লিখছি , লেখার কারণে আমাকে যে এত হেনস্থা করলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, কই কোনও নারী সাংবাদিক তো আমার পক্ষে না হোক, আমার ওপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনওদিন দুটো বাক্য উচ্চারণ করেননি! একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?

-সিভয়েস/এসএইচ

সিভেয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়