Cvoice24.com

সিভয়েসের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া (ভিডিও-সহ)
রাজনীতি কোনো বদ্ধ জলাশয় নয় : ব্যারিস্টার বিপ্লব (ভিডিও-সহ)

প্রকাশিত: ১৪:২১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
রাজনীতি কোনো বদ্ধ জলাশয় নয় : ব্যারিস্টার বিপ্লব (ভিডিও-সহ)

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ছবি : সিভয়েস

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে হাতে খড়ি তাঁর। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। কীভাবে রাজনীতিতে আসলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের নানা কর্মসূচীসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন সিভয়েসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েস প্রতিবেদক হিমাদ্রী রাহা। পাঠকদের জন্য ভিডিওসহ (নীচে সংযুক্ত) সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

সিভয়েস- ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী। পরে জড়িত হলেন আইন পেশায়। এসব বাদ দিয়ে রাজনীতিকে কেন বেছে নিলেন?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ালেখা করেছি। এরপর প্রায় সাত বছর দেশ ও দেশের বাইরে সাংবাদিকতা করেছি। যখন লন্ডনে যাই সেখানেও আমি দুইটি লোকাল টিভি চ্যানেলে কাজ করেছি। পরবর্তীতে সেখানে আমি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করি। আর রাজনীতিতে আমার যোগাযোগ সেই হাই স্কুল থেকেই। আমি যখন সাতকানিয়া হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন দেশের ঘরোয়া রাজনীতি উত্তাল। এরশাদ ক্ষমতায়। ওই সময় ১৯৮৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সাতকানিয়ায় এসেছিলেন। সাতকানিয়া আদালতের বার লাইব্রেরীর মাঠে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে তখনই আমি উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। বলা যায় তখন থেকেই আমি একজন আওয়ামী কর্মী হিসেবে কাজ করেছি।
আমি সাতকানিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলাম। সেসময় যারা ছাত্র রাজনীতি করেছেন চট্টগ্রামে বিশেষ করে দক্ষিণ জেলায়, সবার সাথেই আমার যোগাযোগ ছিল। রাজনীতিতে হঠাৎ করে এসেছি তা কিন্তু নয়। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি তখন থেকেই আমি ছাত্র রাজনীতি ও নানা ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি যখন লন্ডনে যাই  দেশে তখন ‌‌'ও‌য়ান-ইলেভেন'। এর আগে বিএনপি সরকারের সময় দেশব্যাপী বিএনপি'র নানা নিপীড়ন, নির্যাতন, শেখ হাসিনার উপর ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এসব ব্যাপারে আমরা লন্ডনে অনেক কাজ করেছি। সেখানে বিভিন্ন সেমিনার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরা'সহ সেখানে বসবাসরত প্রবাসীদের নিয়ে জনমত তৈরী করেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস যেমন, কমনওয়েলথ অফিস,অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশাল, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিষয়ক যে অফিসগুলো রয়েছে, হাউজ অফ কমনস' এবং ডামি স্ট্রিটের সামনে আমরা মানববন্ধন করেছি।

সিভয়েস- আপনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কবে থেকে যুক্ত হলেন?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- দেখুন রাজনীতি করি আমি সেই স্কুল থেকেই। ১৯৮৮ সালের ১২ এপ্রিল আমি শিবির কর্তৃক নির্যাতিত হই। আমার এলাকা অর্থাৎ সাতকানিয়া লোহাগাড়া শিবির অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা কিংবা আওয়ামী রাজনীতি করা একরকম নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু আমি সেই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেছি। নানা অত্যাচার ও হুমকির মুখেও আমি সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। এছাড়াও আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র ছিলাম তখন বিএনপি ক্ষমতায়। জগন্নাথ হল যেহেতু সংখ্যালঘু ছাত্রদের হল তাই বিএনপির সাম্প্রদায়িক নীতির কারণে সেখানেও বার বার আক্রান্ত হয়েছি। লন্ডন থেকে আমি যখন পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে আসি তখন ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে ২০তম কাউন্সিল হয় তার আগের দুই কাউন্সিলে অর্থাৎ ১৮ ও ১৯ তম কাউন্সিলে সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে উপ-কমিটি ছিলো সেখানে আমি কাজ করেছি। বিশেষ করে ১৯ তম কাউন্সিলের পর দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল ফারুক খানের সাথে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি এবং ২০১০ সালে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান তখন আমাকে সফর সঙ্গী করেন। এরপর ২০১১ সালে অক্টেবর মাসে যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনুর্ধ্ব চল্লিশ বছর নেতাদের চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যখন আমন্ত্রণ জানায় তখন আমাকে ঐ দলের প্রধান করে সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে একটা টিম করা হয়। সেই টিম নিয়ে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে চীনে প্রতিনিধিত্ব করি। এরপর নেত্রীর নির্দেশেই দলের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নানা কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলাম। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের জন্য যে ঘোষণাপত্র উপ-কমিটি করে সে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শেখ ফজলুুল করিম সেলিম, সেখানে আমি নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। এই বিষয়গুলো,আমার অতীত, আমার যে রেকর্ড, আমার যে কন্ট্রিবিউশন এগুলো বিবেচনায় নিয়ে দল আমাকে উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি। এটি এমন একটি দল যে দলের নেতৃত্বে দেশে স্বাধীনতা এসেছে। যার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এরপর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ তার ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার এসব ফিরে পেয়েছে। আমি মনে করি এমন একটি দলের কর্মী হতে পারাও গৌরবের।

সিভয়েস- একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনে তরুণদের জয়-জয়কার। বলা যায় প্রবীণদের সাথে সমন্বয় করে দলে তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও কি তরুণদের প্রধান্য দেয়া হবে?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- দেখুন রাজনীতি কোনো বদ্ধ জলাশয় নয়। রাজনীতি একটি প্রবাহমান নদীর মতো। রাজনীতির বিকাশ ঘটে তার নিজস্ব গতিতেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রাচীনতম দল কিন্তু সবচেয়ে আধুনিক। দলের কেন্দ্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কিছু কর্মী আছে যারা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া। আবার পরবর্তী প্রজন্মে কিছু কর্মী আছে যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন কাজ করছেন। গত কাউন্সিলে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো অনেক তরুণকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আসলে তরুণ না। কিন্তু আওয়ামী লীগের বয়সের সাথে তুলনা করলে তরুণ বলা চলে। আমাদের নেত্রী প্রায় সময়ই বলেন, ‌'আগামী দিনের নেতৃত্ব' এই আগামীর নেতৃত্ব তৈরী করার জন্যই তিনি শুধু রাজনীতি নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে তরুণদের উঠে আসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তিনি চান- দেশের প্রতিটি সেক্টরে সেসব তরুণরাই উঠে আসুক, যারা দেশপ্রেমকে ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করবে। আপনি দেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে এখন অনেক তরুণদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অনেক তরুণ এখন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগেও এখন বয়সের সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগে বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ২৯ বছর। এটিও কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চালু করেছে।

সিভয়েস- তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে একটি ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে সেটিকে কিভাবে বিশ্লেষন করবেন?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যা নির্বাচন ছাড়া কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন অনেকেই বলেছিলো যে নির্বাচন বর্জন করতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম তা কেন যৌক্তিক। তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছিলেন নির্বাচন দিয়ে। এরপর ১৯৭৯ সালে যখন স্বৈরাচারী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে কিংবা ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর এরশাদের শাসনামলে দেশে কোনো আইনের শাসন ছিলো না। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়েছিলো বেআইনিভাবে। জাতীয় চার নেতাকে খুব নির্মমভাবে কারাগারে হত্যা করা হয়। এই অবস্থায় ১৯৭৯ সালে আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ঐসময় জিয়াউর রহমান আমাদের বলেছিলেন ৪০ টি সিট দেবেন আওয়ামী লীগকে। আমরা ৩৯ টি পেয়েছিলাম। ৮৬ সালেও কিন্তু সারাদেশে স্বৈরাচার এরশাদের যে দাপট, সেসময় যে নির্বাচন হয় সেখানেও কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অংশ নেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশে যখন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন প্রতিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছি। কারণ আমরা মনে করি যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র মাধ্যম হলো নির্বাচন। এখন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অনেক স্বাধীন। পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ১৯৭৫ এর পর ২১ টি বছর দেশের গণতন্ত্র  ও সংবিধানকে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন বলতে কিছু হয়নি তখন। জিয়াউর রহমানের ‌'হ্যাঁ-না' ভোট থেকে শুরু করে এরাশাদের প্রতিটি নির্বাচনই ছিলো প্রহসনের নির্বাচন। আমরা ক্ষমতায় এসে এসব সংস্কার করেছি। স্বচ্ছ ব্যালেট বক্সের যে বিষয় সেটিও আমরা করেছি। এক কোটি ২৩ লাখ যে ভুয়া ভোটার এসবও আমরা চিহ্নিত করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা শক্তিশালী করেছি। নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় হয়েছে। ফাইনান্সিয়াল যে অটোনমি আমরা তাদেরকে দিয়েছি। একটি নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন করা প্রয়োজন এমন ১৯টি আইন আমাদের মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে পাস করেছেন। আমি বলতে চাই যে, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আমি শুধু বলতে চাই, একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা ক্ষমতা দেয়া দরকার তার সব ক্ষমতাই নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে।
আজকে যে তত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হচ্ছে, দেখুন আমরা সবাই মিলে যখন এরাশাদ সরকারের পতন ঘটালাম তখন আমাদের নেত্রীই কিন্তু তত্বাবধায়ক থিওরি চালু করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি এই তত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিকে কলুষিত করেছে। আপনি দেখবেন ২০০৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই ক্যু করে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়ে গেলেন। আসলে বিএনপি দুরভিসন্ধিমূলক ইয়াজউদ্দিনকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বানিয়েছিলেন যাতে করে তারা পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসতে পারে। যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দেশের মানুষ আন্দোলন করে প্রতিষ্ঠা করেছিলো নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেই সরকার ব্যবস্থাকেই বিএনপি কলুষিত করলো ক্ষমতায় আসার জন্য। একই সাথে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, তত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ। কারণ আমাদের সংবিধানেই বলা আছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের পক্ষেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এসব ক্ষমতা ব্যবহার করেন। যারা তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন বা সদস্য হন তারা তো অনির্বাচিত। তারা তো জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করেনা। তাই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা-তো আইনের পরিপন্থী। তাই উচ্চ আদালত সেটিকে বাতিল করেছে। আদালত বলেছে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ষষ্ঠ বিভাগে বলা আছে প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বিচার বিভাগের প্রধান। আমরা দেখেছি বেগম খালেদা জিয়া তার দলের একসময়ের বিচারপতি কে এম হাসানকে পরবর্তী তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বয়সসীমা বাড়িয়েছিলো। তার মানে বিচার বিভাগকে দূষিত করে তিনি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন। এটিও একটি অবজারভেশন ছিলো তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে দূষিত করেছে। একারণে উচ্চ আদালত তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে কিভাবে নির্বাচন হবে। পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হয়। আপনি দেখেন একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীতে ২য় কোনো দেশ নেই যেখানে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু আছে।

সিভয়েস- কিন্তু বিএনপি’তো বলছে তারা তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এবং নেত্রীকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবেনা। বিষয়টি নিয়ে আপনার মত কি?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- একাদশ সংসদ নির্বাচন সন্নিকট। এই সংসদের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংবিধানের নিয়মানুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদের ৯০ দিন আগের মধ্যবর্তী সময়েই নির্বাচন করতে হবে। তো আমরা নির্বাচন করবো সংবিধান অনুসরণ করেই। আমরা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সেটিকে যদি আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে চাই আমি মনে করি সংবিধান মেনে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সকল দলের নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। বিএনপি যে দাবী করছে তা অযৌক্তিক। কারণ আপনি দেখেন এই সরকারের আমলে যতগুলো সিটি কর্পোরেশন বা অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে বেশিরভাগই বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। তারা আসলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এসব করছে। তারা আসলে দিশেহারা। তাদের দলের চেয়ারপারসন দুর্নীতি মামলায় কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মানি লন্ডরিং মামলায় বিদেশে পলাতক। তাদের কোনো নেতৃত্ব নেই। এই দল ক্রমাগত ভুল রাজনীতি করেছে। সেটির মাশুল তারা এখন দিচ্ছে।

সিভয়েস-আওয়ামী লীগ ঢাকা থেকে কক্সবাজার যে রোড শো করলো বলতে গেলে যে নির্বাচনী শোডাউন করলো তার প্রেক্ষিতে আসন্ন নির্বাচনে নৌকার অবস্থান কেমন বলে মনে হয় আপনার?

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- দেখুন দেশের কথা বাদই দিলাম, চট্টগ্রামের কথাই বলি। এখানে এখন ফ্লাইওভার হয়েছে, মীরসরাইতে ইকোনমিক জোন হচ্ছে, কর্ণফুলীতে টানেল হচ্ছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এছাড়াও নানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলমান। এগুলো কিন্তু এই সরকারই করেছে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দেশের মানুষ আবারো নৌকাতেই আস্থা রাখবে। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সিভয়েস- দেশের বিশাল একটি অংশ কিন্তু তরুণ ভোটার এবং দিন দিন রাজনীতিতে তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে। এই তরুণদের উদ্দেশ্যে আপনার কি নির্দেশনা থাকতে পারে?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- এখনকার তরুণরা অনেক মেধাবী। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো 'দেশপ্রেমিক' হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এসব জেনেই রাজনীতিতে আসতে হবে। মেধাশূণ্য রাজনীতি কখনোই মঙ্গলজনক নয়। তাই তরুণ যারা রাজনীতিতে আসতে চায় তাদের প্রতি আমার একটাই নির্দেশনা, দেশের ইতিহাসকে জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বুকে ধারণ করতে হবে। তবেই রাজনীতিতে আসতে হবে।

সিভয়েস- আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া- আপনাকে ও সিভয়েসের সকল পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

 

সিভয়েস/এস.আর

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়