Cvoice24.com

সিভয়েস কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সিটি মেয়র
আমার চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিলোনা- আ জ ম নাছির (ভিডিওসহ)

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
আমার চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিলোনা- আ জ ম নাছির (ভিডিওসহ)

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিশেষ সাক্ষাৎকার। ছবি: সিভয়েস

আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে। কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। বলা যায় তৃণমূল থেকেই ছাত্ররাজনীতির নানা ধাপ পেরিয়ে, নানা প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে আজকের এই আ জ ম নাছির হয়ে ওঠেছেন তিনি। তবে খুব একটা মসৃণ ছিলোনা তাঁর এই রাজনৈতিক পথচলা। সম্প্রতি সিভয়েস কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি থেকে শুরু করে এখনকার সময়ে চলমান রাজনীতির নানা দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েস প্রতিবেদক হিমাদ্রী রাহা। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ। 

-আসলে রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি ১৯৬৯ সালে। আমি যখন চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে ছাত্র সমাজ ছিলো তারা তখন দেশ ও কৃষ্টি আন্দোলন করেছিলো। যেটি পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিলো। তখন ছাত্রলীগের নেতারা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় শহর ছাত্রলীগের একদল নেতা সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলো। তারা শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রদের সামনে আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ও মিছিলে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে সেই মিছিলে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। বলা যায় ঐদিনই আমার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। তারপর তো ৭০ সালের নির্বাচন হলো। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলেন। দেশের মানুষকে সংগঠিত করলেন। সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেন। তারপরও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। বলা যায় বাঙালির স্বার্থের বিপক্ষে পাক জান্তারা অবস্থান নেয়। বঙ্গবন্ধু তখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং একত্রিত করেছিলেন। বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর সেই আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো ও দেশ স্বাধীন করেছিলো। 

স্বাধীনতার পর দেশকে অর্থহীন করার জন্য বিভিন্ন দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা উঠে পড়ে লাগে। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়েই মূলতঃ আমি পুরোপুরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। তখন আমি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যয়ন করি। ১৯৭৬ এর প্রথম দিকে কলেজের লিচুতলায় আমরা কয়েকজন সমবেত হয়ে ‘জয় বাঙলা,জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করি। বলা যায় তখন চলমান ‘মার্শাল ল’ বলবৎ থাকা সত্বেও আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ঝটিকা মিছিল করে চন্দনপুরা দিয়ে বের হয়ে যাই। বলা যায় তখন থেকেই সচেতনভাবেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। 

এরপর শহর ছাত্রলীগের (বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তখন আমরা যারা চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ করতাম একটি শ্রেণিকক্ষে সম্মেলনের ব্যবস্থা করেছিলাম। সেখানে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছিলো। সেখানে আমি সর্বসম্মতিক্রমে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। এরপর ১৯৭৭এর ডিসেম্বরে শহর ছাত্রলীগের (বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগ) সম্মেলন হয়। সেখানে আমি শহর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। এরপর যখন মহানগর ছাত্রলীগ গঠিত হয় তখন আমি মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। পরবর্তী সম্মেলনে আমি আবারো মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়। তখন সহ-সভাপতি ছিলো ৭ জন। তাদের তখন বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বগুলো পালন করতে হতো। এর পরের সম্মেলনে ১৯৭৯ সালের দিকে আমি সরাসরিভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। তখন সভাপতি ছিলো আবদুল মান্নান (যিনি বগুড়া থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন) আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক। এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমি। 

আমার এই রাজনৈতিক চলার পথ খুব একটা মসৃণ ছিলো না। বার বার বিরোধী শক্তির ঘাত প্রতিঘাত ও নানা প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমি। কখনো মিথ্যা ও অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। মাননীয় নেত্রীই আমাকে খুঁজে নিয়েছেন। আমাকে তিনি এই সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসিয়েছেন। তিনিই আমাকে মেয়র নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আমৃত্যু তাঁর এই প্রতিদান দিয়ে যাবো। দলের জন্য দেশের জন্য নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কাজ করে যাবো। এটাই আমার অঙ্গীকার। এটাই আমার প্রত্যয়। 

সিভয়েস/এস.আর

হিমাদ্রী রাহা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়