Cvoice24.com


রাজনীতির তৈলাক্ত বাঁশে ড. কামাল

প্রকাশিত: ১১:২৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
রাজনীতির তৈলাক্ত বাঁশে ড. কামাল

ছবি: সিভয়েস

খুব দ্রুত রাজনীতির গতি প্রকৃতি রীতিমত ঘুরপাক খাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হবে নির্বাচনী দাবা খেলা। বেগম জিয়া কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিএনপি’র নির্লিপ্ত হাবভাব দেখার পর অনেকের মনে হয়েছে শেখ হাসিনার নির্বাচনী বৈতরণী বোধহয় বিনাবাঁধায় নোঙ্গর ফেলবে পরবর্তী ঠিকানায়। বিষয়টি নাটকীয় মোড় নেই ড. কামালের আবির্ভাবের পর থেকে। তিনি জাতীয় ঐক্যের নামে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপি’র মীর্জা ফখরুলের সাথে। প্রত্যন্ত গ্রামে চায়ের টেবিল থেকে পাঁচতারকা হোটেলের মদের আড্ডায় ড. কামাল যে শেষ বয়সে এসে হাসির খোরাক হতে চলেছেন তা তিনি যদি টের নাও পেয়ে থাকেন তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে।  

সোহরাওয়ার্দী সাহেবের বিখ্যাত উক্তি ছিল জিরো প্লাস জিরো আখেরে জিরো। একবিংশ শতকের এই সময়ে এসে ড. কামাল, ডা. বি চৌধুরী ও মান্না সাহেবের যে রাজনীতি তিনটি জিরো প্লাস জিরো প্লাস জিরো ইক্যুয়েলটু জিরো তা তাদের কে বোঝাবে। যাই হোক, সে হিসেব নিতান্তই তাদের। কিন্তু আমি অবাক হই নিতান্ত ব্যক্তি হাসিনার সাথে ব্যক্তিদের দ্বন্দ্ব থেকে ড. কামাল শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে উদ্ধারের মিশনে নেমেছেন। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তিনি কি করে ভুলে গেলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশি দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সাতাত্তরে হ্যা না ভোটের নাটক ঊনাশির বাননের পিঠাভাগের সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। তার সুযোগ্য স্ত্রী বেগম জিয়া ‘৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারিতে যখন সম্পূর্ণ একতরফা নির্বাচন হয়েছিল তখন মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি। অশুদ্ধ হয়েছে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এ শেখ হাসিনার দশম সংসদ নির্বাচন।  

অথচ এই ড. কামালই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনাকে সাš¦Íনা দিয়ে বলেছিলেন, মাগো আমি কখনো তোমাদের একলা ফেলে যাব না। যতই শেখ হাসিনা তিলে তিলে সংযত হচ্ছিলেন ততই যেন ড. কামাল হয়ে উঠছিলেন ঈর্ষাপরায়ন। আসলে তিনি যখন দেখলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার খায়েশ তার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ছেড়ে দিলেন আওয়ামী লীগ। তখন করলেন গণফোরাম ্ গোঠা দেশে দলটি একটি আসনেও জেতার সম্ভাবনা নেই। নির্লজ্জ্বভাবে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিনের সেনা সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। শিক্ষা আখেরে ডা. কামাল, মান্না সাহেব আর বি চৌধুরীই পাবেন। শুধু দিন কয়েক অপেক্ষা মাত্র।  

এই সব জিরো পলিটিশিয়ানরা কি আবার ২০১৪ এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট বোমা হামলার সোনালী দিন ফিরে আনতে চাইছেন। আমার মেজ কাকা ওইদিন বলেছিলেন, দেখো বাবা এই বোমা হামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি রাজনীতির কবর যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি এও বলেছিলেন, আমরা ততোদিন বাচঁবো না তবে তোমরা নিশ্চিত দেখবে দেশে বিএনপির পরিণতি হবে মসলীম লীগের চেয়ে ভয়াবহ। হচ্ছেও তাই।  

যারা বলেন, তারেক-বাবর-হারিছ-পিন্টু ঘটনা ঘটিয়েছে ২১ আগস্ট ২০০৪। বেগম জিয়া জানতেন না। আমি এটা বিশ্বাস করি না। এত্তো বড় ঘটনা দেশের প্রধান নির্বাহীকে না জানিয়ে ঘটবে তা পাগলেও বিশ্বাস করার কথা না। ধরলাম তিনি জানতেন না। কিন্তু বিচারপতি জয়নাল আবেদীন কমিশনের প্রতিবেশী গোয়েন্দা সংস্থা তত্ত্ব, পুলিশের জজ মিয়া নাটকগুলো কি তার ইশারা ছাড়া হয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। বেগম জিয়াকেও করেনি। একজন আইনের ছাত্র হিসেবে পাঠকদের বলতে চাই বেগম জিয়া-তারেক-বাবর-হারেছ-পিন্টু ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার বড় প্রমাণ হলো আদালতের অনুমতি ছাড়া কোন সাহসে গ্রেনেড হামলাসহ আলামাতগুলো নষ্ট করা হয়েছিল। ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি বলি জানিনা। তবে বেগম জিয়ার সৌভাগ্য হল এখনো অবধি তিনি ২১ আগস্ট মামলার আসামি হননি। তবে অদূর ভবিষ্যৎ হবেন। আইনের সে সুযোগ আছে। অবশ্য আগে দেখা যাক তার রাজপুত্র তারেক আর অর্ধশিক্ষিত বাবরের কি পরিণতি হয়। মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিনের আশীর্বাদে ড. কামাল, ড. ইউনুছের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে নিতান্ত শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে। তারেক রহমান বানাবেন সে আশা দুরাশা মাত্র। রাজনীতি বড় নিষ্ঠুর খেলা। আওরঙ্গজেব আপন বড়ভাই দারাশিকোকে দু’টুকরো করেছিলেন। পিতাকে আমৃত্যু বন্দী করে রেখেছিলেন আগ্রাফোর্ডে। জিয়াউর রহমানের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও বীরোত্তম পঙ্গু তাহেরকে প্রহসনের বিবাদে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। সেদিন কারা ফটকে তাহেরের বিচারের নাটক হয়েছিল। আজ একই কারা ফটকে বিচার চলছে বেগম জিয়ার।  

বেগম জিয়া নির্বাচনের আগে মুক্তি পাবেন এমন আশা বিএনপির কেউ আর করে না। তারেক বাবরদের মামলার পরিণতি আঁচ করা যায়। জান বাচাঁনো যেখানে ফরয সেখানে নেতৃত্বাধীন বিএনপি নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবে এটা বিশ্বাস হয়না। লড়াইয়ে নামলেও এক পর্যায়ে সে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে পালানোর সম্ভাবনা রয়েছে তা রসিকজনের বুঝতে কষ্ট হয় না।  

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আর যাহোক বিএনপিকে ঠেলে দড়ি টানবে এটা আমার বিশ্বাস হয়না। বরং বোনের পাশে থেকে গর্জে উঠার সম্ভাবনা বেশি। বি চৌধুরী আর কর্ণেল অলি বখে যাওয়া ভাইপোর কান্নায় গলে যাবে না তা অন্তত আমার মনে হয় না। বাকী থাকেন মান্না ভাই। লাশ ফেলার মন্ত্রদাতা এই ভাইয়ের চেহারা দেখলেই আমার ঘেন্না আসে। বাকী থাকে ড. কামাল। আন্তর্জাতিক এই আইনজ্ঞ রাজনীতির তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে কতটুকু উঠতে পারবেন না জানি না। তবে তার নামার দৃশ্যটা দেখার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।  

লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট

-সিভয়েস/এসএ/কেএম

শংকর প্রসাদ দে

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়