Cvoice24.com

বিচারক সংকট চরমে
স্মরণকালের ভয়াবহ মামলাজট চট্টগ্রাম আদালতে

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৩১ আগস্ট ২০১৮
স্মরণকালের ভয়াবহ মামলাজট চট্টগ্রাম আদালতে

ছবি: সিভয়েস

মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার হাবিলদারবাসা এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ তার মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের নির্ধারিত তারিখে এসেছেন চট্টগ্রাম আদালতে। কিন্তু বিচারক না থাকায় যুক্তি তর্ক হচ্ছেনা। এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম হজ্ব পালনের জন্য ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাইব্যুনাল ৬ এর বিচারক মোঃ মঈন উদ্দিন।

শুধু তাসলিমাই নন, এমন অনেক বিচারপ্রার্থী চট্টগ্রাম আদালত থেকে হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এভাবে দিনের পর দিন মামলা চলমান না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ মামলাজটে পড়েছে চট্টগ্রাম আদালত। চট্টগ্রামের ৮৬টি আদালতের মধ্যে ২১ টি আদালতে বিচারক না থাকাকে মামলাজটের প্রধাণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিচারক শূন্য এসব আদালতে বিচারাধীন আছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশী মামলা। অন্য আদালতের বিচারকরা বিচারক শূন্য এসব আদালতে ‘ভারপ্রাপ্ত বিচারক’ হিসেবে কাজ করছেন। বিচারক সংকটে বিচারপ্রাথীরা যেমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন একইসাথে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মামলা নিষ্পত্তি।

চট্টগ্রামে জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত রয়েছে ১৩টি। এই ১৩ টি আদালতের ৭টিতেই নেই কোন বিচারক । গুরুত্বপূর্ণ এই সাত আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১১হাজার ৩৬৩টি মামলা। অথচ সর্বনি¤œ দশ বছর ও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের  বিধান রেখে খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধের বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে এই ১৩ টি আদালতের বিচারকদের । আপিল, রিভিশনসহ বিশেষ আইনের গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারও হয়ে থাকে এই সব আদালতে।

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে পটিয়ার একমাত্র চৌকি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ ৫ আদালতে নেই কোন বিচারক। এসব আদালতে বিচারাধীন আছে ২ হাজার ৯৪৬টি মামলা।

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে থাকা ৮টি আদালতের মধ্যে বিচারক নেই ২টিতে। এই দুই আদালতে ৩ হাজার ৩৮৫টি মামলা বিচারাধীন ।

জেলা ও দায়রা জজের অধীনে মোট ৪৩টি আদালত রয়েছে । তিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ ৯টি বিচারক শূন্য আদালতের বাকি ৬টিই চৌকি আদালত। এই ৬ চৌকি আদালতগুলোর মধ্যে পটিয়ার ৩টি , ১টি সাতকানিয়ার, ১টি বাঁশখালীর ও ১টি রাউজানের । ১৬ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন এই ৯ আদালতে।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারের জন্য গঠিত হয় বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্র্যাইব্যুনাল। কিন্তু ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী থেকেই এই ট্রাইব্যুনাল বিচারক শূন্য। বিশাল এই অঞ্চলের জন্য দ্রুত বিচার আইনে গঠিত একমাত্র ট্রাইব্যুনালটিতে বিচারাধীন রয়েছে ৮৮টি গুরুত্বপূর্ণ মামলা ।

জেলা প্রশাসনের অধীনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ৩ টি আদালত ও ৪ টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ও ১টি সার্টিফিকেট আদালত রয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালত আছে ৩টি । প্রায় এসব আদালতের বিচারকগণ ব্যস্ত থাকেন প্রশাসনিক কাজে। এ আদালতগুলোতেও রয়েছে কয়েক হাজার মামলা।

বিচারক শূন্যতা নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আদালতে বিচারক নেই। এই সংকট মামলা নিষ্পত্তিতে বাধা সৃষ্টি করছে। গুরুত্বপূর্ণ আদালত ছাড়াও অনেক আদালতে বিচারক নেই। এতে বিচারক না থাকায় বিচার প্রার্থীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বারবার বিষয়টি অবগত করছি। তবে যেসব আদালতে বিচারক নেই ভারপ্রাপ্ত বিচারকগণ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মামলাগুলো চলমান রাখতে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।

এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পিপি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নতুন অনেকগুলো আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি কিছু কিছু আদালতের বিচারক অন্যত্র বদলি হওয়ায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। অচিরেই সেই শূন্যতা কেটে যাবে। চট্টগ্রাম আদালতে বিচারক শূন্য প্রতিটি আদালতে বিচারক নিয়োগ বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে এই সংকট দূর হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের ২০ টিরও অধিক আদালতে বিচারক নেই। ফলে বিচারপ্রার্থীরা চরম সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনেক নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য বিচারক শূন্য আদালতগুলোতে বিচারক নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি একাধিকবার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। টেলিফোনের মাধ্যমেও তাঁদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা প্রতি মুহুর্তে আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু সেটি প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা এখনো কোন বাস্তবায়ন দেখতে পারিনি।

অচিরেই এই সমস্যার সমাধান না হলে চট্টগ্রাম আদালতে বিচারক শূন্যতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও তিনি সিভয়েসকে জানান।

-সিভয়েস/এইচআর/কেএম

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়