Cvoice24.com


একজন নিভৃতচারী বঙ্গবন্ধুপ্রেমি কাইয়ুম নিজামী

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৫ আগস্ট ২০১৮
একজন নিভৃতচারী বঙ্গবন্ধুপ্রেমি কাইয়ুম নিজামী

কাইয়ুম নিজামী। ফাইল ছবি

‘তখন জীবন ছিলো, ছিলে একা
এখন জীবন নেই, তাও তুমি একা
তবে ভাবনা কিসে
তোমাকে থাকতে হবে একা
কারণ জীবনহীন তুমি
জীবনের চেয়েও অনেক বড়’।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কাইয়ুম নিজামী রচিত ‘টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম তোমার’ মহাকাব্যের কয়েকটি লাইন এগুলো। জীবনের অনেকটা সময় মুক্তিকামী বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জেলখানায় কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ১৫ আগষ্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর পবিবারের সদস্যদের দাফন করা হয় বনানীর কবরস্থানে। আর শেখ মুজিব সমাহিত হন টুঙ্গিপাড়ায়। এই বিষয়টি হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দিয়ে এভাবেই কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন কাইয়ুম নিজামী। 

জীবনে কখনো বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি। যাওয়া হয়নি জাতির জনকের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়ায়। তবুও হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দিয়ে অনুভব করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবকে। ২০ বছর ধরে গবেষণা করছেন। আর লিখে চলেছেন প্রিয় ব্যক্তিত্বের বীরত্বগাঁথা নিয়ে। বঙ্গবন্ধুকে আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখার নিজস্ব তাগিদ থেকেই বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস অনুসন্ধানে তিনি ছুটে চলছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সৃষ্টি করছেন একের পর এক কাব্য, মহাকাব্য। নিভৃতচারী বঙ্গবন্ধুপ্রেমি কাইয়ুম নিজামী জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাব্য সাধনা। তাঁর জন্য কিছু করতে পারলেই যেন জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পান। ‘টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম তোমার’ মহাকাব্যের পর তিনি প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একহাজারেরও অধিক কবিতা সম্বলিত ৬ খন্ডের মহাকাব্য ‘হাজার কবিতায় বঙ্গবন্ধু’। একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কোনো লেখকের একহাজারের অধিক কাব্য রচনা ইতিহাসে বিরল। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্থান, ঘটনা, ১৫ আগষ্টের কালো রাত নিয়ে ৮০টি ছবির ঘটনা নিয়ে রচনা করেছেন বিশ্লেষণধর্মী কাব্যগ্রন্থ ‘যে ছবি কবিতার কথা বলে’। 

অবিরাম কাব্য রচনায় কবি কাইয়ুম নিজামী শহরের কোলাহল ছেড়ে বহুদিন কাটিয়েছেন সমুদ্র শহর কক্সবাজারে, কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের নিরব নিভৃত এলাকায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। যেখানে বসেই রচিত হয়েছে তার সুবিশাল সাহিত্যভাঙ্গার। অবর্ণনীয় শ্রম, অপরসীম ত্যাগ আর কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এরকম অবিস্মরণীয় ও মহৎ কাজ করা সম্ভব নয়। 
প্রচার বিমুখ কাইয়ুম নিজামী তার প্রিয় ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সৃষ্টি করে চলেছেন একের পর এক গ্রন্থ। তিনি নিজে বই লিখেন। নিজের প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করেন। আবার সেই বই বিক্রিও করেন। অনেকের কাছে হয়তো কঠিন এ কাজ। নিতান্তই আবেগ আর ভালোবাসা থেকেই তিনি এতগুলো কাজ করতে পেরেছেন। 

কাইয়ুম নিজামী বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সময়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তখন দেশব্যাপী প্রচন্ড ছাত্র আন্দোলন চলছিলো। এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বোঝাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। ৬৯ এর গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি।  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালো রাতে যখন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় তখন পড়াশোনার জন্য আমি জাপানে ছিলাম। জাতির পিতকে খুন করার পর পুরো এক সপ্তাহ অঝোরে কেঁদেছি। একটি দিনের জন্যও ভুলে থাকতে পারিনি তাকে। ২ বছর পর দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে এসে দেখি বঙ্গবন্ধুর চেতনা ভুলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। একটি পক্ষ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য তৎপর ছিলো। তখন আমি শপথ নিলাম, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসুক না আসুক আমি আমার সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাগরুক রাখবো। এমন কিছু করে যাবো যাতে বঙ্গবন্ধু আজন্ম বেঁচে থাকবেন আগামী প্রজন্মের কাছে। এরপর আমি দিনরাত বঙ্গবন্ধুর উপর পড়াশোনা করতে লাগলাম। রচনা করতে লাগলাম কবিতা, গান, মহাকাব্য।

কাইয়ুম নিজামী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি ১১০টি গান লিখেছি। ‘টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম তোমার’ মহাকাব্যের পর তিনি প্রকাশ করেছি ৬ খন্ডের মহাকাব্য ‘হাজার কবিতায় বঙ্গবন্ধু’।
এছাড়া বিভিন্ন ছবির প্রেক্ষাপট নিয়ে কাহিনী বিশ্লেষণধর্মী কবিতা ‘যে ছবি কবিতার কথা বলে, কবিতায় কালো রাত’ প্রকাশিত হয়েছে। 

কবি কাইয়ুম নিজামী বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে ঠিকই, তার স্মৃতি এতটুকুও মুছে যায়নি বাঙ্গালীর হৃদয় থেকে। তিনি আজন্ম বেঁচে থাকবেন বাঙ্গালীর হৃদয়ে। তিনি কবিতায় উল্লেখ করেন,

‘শেখ মুজিব নেই ৩২ নম্বরে তাতে কি?
শেখ মুজিব বেঁচে আছেন বাংলার ঘরে ঘরে
শেখ মুজিব আছেন
মুক্তিকামী প্রতিটি বাঙালির নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে।’

কাইয়ুম নিজামী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর কারণে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা করি। জাতির পিতাকে ভালোবাসি। তাঁর কথা ভাবতে গেলে এখনো চোখের কোণে অশ্রু জমা হয়। বঙ্গবন্ধু মতো একজন অসাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে লিখা খুব কঠিন কাজ। তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্ম যদি এসব গ্রন্থ থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে এখানেই আমার জীবনের স্বার্থকতা।

বঙ্গবন্ধু পাগল কাইয়ুম নিজামী জন্মেছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী গ্রামে। একসময় শিক্ষাকতা করেছেন সরকারহাট এনআর উচ্চ বিদ্যালয়ে। রচনা করেছেন ৮০ টি মতো উপন্যাস। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষনা করেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম তোমার’ ‘হাজার কবিতায় বঙ্গবন্ধু’ ‘কন্যার নাম শেখ হাসিনা’ হযরত মোহাম্মদ (সঃ)কে নিয়ে লিখেছেন ‘আমিনা মায়ের কোলে’ মহাকাব্য। 

সিভয়েস/এসএ/এমইউ 

শাহাদাৎ চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়