Cvoice24.com

কক্সবাজার সৈকততীরে সরকারি জমি দখল
ভূমিদস্যুর এতো ক্ষমতা! ৬ বার উচ্ছেদ করেও ফের দখল

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৮ নভেম্বর ২০১৮
ভূমিদস্যুর এতো ক্ষমতা! ৬ বার উচ্ছেদ করেও ফের দখল

ছবি : সিভয়েস

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের তরঙ্গ রেস্তোঁরার পাশে ঝাউগাছ কেটে কোটি টাকার সরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। 

মাটি ভরাট করে সেই জায়গায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, গত দেড় বছর ধরে এই জমি দখল করে ‘হাঁড়ি’ নামের একটি রেস্তোঁরা নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। পৃথক অভিযানে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ভূমিটি দখলমুক্ত করলেও অভিযান শেষে আবারো বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর বুলডোজার দিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মত নির্মাণাধীন স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন। বুলডোজার লাগিয়ে উচ্ছেদ করার এক সপ্তাহ পর আবারও ভূমিদস্যুরা ওই জমি দখল করে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত দেড় বছরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতার ইশারায় সেই জমি আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে।'

তিনি জানান, বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঝাউগাছ রক্ষায় এই জমি ঘেরাও দেয়া হয়েছিল।

জানা যায়, জমিটি দখল করে নেয়ার আগে অনেক ঝাউগাছ থাকলেও ভূমিদস্যুরা দখল করার পর সেগুলো কেটে ফেলে। অভিযানের সময়  অবৈধভাবে কাটা বেশ কয়েকটি ঝাউগাছ জব্দ করেছিল বনবিভাগ। 
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মামলা চলাকালীন সময়েই আবারো অসংখ্যা ঝাউগাছ কেটে ভূমিটি দখল করা হয়েছে।

সামাজিক আন্দোলনের নেতা কবি মানিক বৈরাগী বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তীরে ঝাউগাছ গুলো লাগিয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ভূমিদস্যুরা এসব ঝাউগাছ কেটে সরকারি সম্পত্তি দখল করছে। বার বার উচ্ছেদের পরও কিভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি সম্পত্তি দখল করে। জেলা প্রশাসন কোনভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

জানা যায়, জমিটি দখলের দায়ে কলাতলী এলাকার নুর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাকে লঘুদন্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে আবারে আটক করা হয়। 

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম শেখ বলেন, উচ্ছেদের পর তারা গোপনে আবারও দখল করতে পারে। আবারও অভিযান চালানো হবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি পর পর দুইবার অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু খবর পেয়েছি আবারও দখল হয়ে গেছে জায়গাটি। শিগগিরই আবারও অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

সরকারি জমিটি রক্ষা করার জন্য স্থায়ী কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান নাজিম উদ্দিন। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, উচ্ছেদের পর সরকারি জমিতে আবারও স্থাপনা তৈরীর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের ১৩০ একর জমির মধ্যে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ৮৭টি প্লটের বিপরীতে ৮৬.৩১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। আর ওই বরাদ্দের মধ্যে সৈকত সড়কের সুগন্ধা পয়েন্টে তরঙ্গ রেস্তোঁরার পাশে এস. আলম গ্রুপের নামে প্লট বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ২০১০ সালে সরকার এসব প্লটের বরাদ্দ বাতিল করে লাল পতাকা দিয়ে সরকারের আয়ত্ত্বে নেয়।
 

-সিভয়েস/এসএইচ

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়